ঢাকা ২৮ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে সালমা বানু! ভারতীয় পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা , ৭০ জন নিহতের দাবি ভারতের। পৈত্রিক সম্পত্তি বাঁচাতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিএমপিতে মাহাদী হাসানের অভিযোগ সমাজসেবা অধিদপ্তর ও জাতীয় প্রতিবন্ধি উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পুনর্বাসন কেন্দ্র গাবতলী'র বস্তিতে আগুনে পুড়ে যাওয়া হতদরিদ্রদের মাঝে ইফতার মাহফিল ট্যাক্স ল'ইয়ার্স সোসাইটি ২০১৭ এর নির্বাচিত নতুন কমিটির অভিষেক দোয়া ও ইফতার অনুষ্ঠিত জুড়ীতে আমার দেশ পত্রিকার নাম ভাঙ্গিয়ে এক প্রতারকের চাঁদাবাজির অভিযোগ ‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জালাল আহমেদ বহাল তবিয়তে

সুনামগঞ্জে নাগরিক শোক সমাবেশে বক্তারা : পীর হাবিব শুধু সুনামগঞ্জের না সারা পৃথিবীর বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি ছিলেন

#

১২ মার্চ, ২০২২,  12:07 PM

news image

সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের নাগরিক শোক সভা শেষ পর্যন্ত বিশাল শোক সমাবেশে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার (১১ মার্চ) বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ (বালুর মাঠে) সুনামগঞ্জ পৌরসভার আয়োজনে দেশের বরেণ্য সাংবাদিক সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান পীর হাবিবুর রহমানের স্মরণে ঐ নাগরিক শোক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সাংবাদিক ব্যাক্তিবর্গ সহ নানান শ্রেণী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। শোক সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ করা হয়। সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত এর সভাপতিত্বে শোক সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বিপিএম। সমাবেশে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেছেন,পীর হাবিব একজন লড়াকু সৈনিক তিনি সুনামগঞ্জ জেলাকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ২০১০ সালে। তিনি আমাকে সুনামগঞ্জের লোক হিসেবে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে আ.লীগের যোগ দেয়ার পর থেকে নানান ভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেন, যখনই সময় পেত পীর হাবিব আমার সম্পর্কে লিখত। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত লেখা লিখেছে তার চেয়ে আমার সম্পর্কেও কম লিখে নাই। অনেক কিছুই লিখেছে। তার আর আমার মধ্যে নীতিগত একটা পার্থক্য ছিল তাহলো আমি যেভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম আর হাবিব আমার বোন শেখ হাসিনার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল। আমি লম্বা মানুষ বোকা, বঙ্গবন্ধু আমার চেয়ে দুই ইঞ্চি লম্বা ছিলেন তিনিও বোকা ছিলেন। তবে গরীবের অধিকার আদায়ে সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। যদি বঙ্গবন্ধু বোকা না হতেন তাহলে ঘাতকের হাতে এভাবে ১৯৭৫ সালে তাকে জীবন দিতে হতনা। তিনি মানুষকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতেন আর সেটাই তার জন্য কাল হয়েছে। তিনি সব সময় মানুষের সাথে বোকার মত আচরণ করতেন মানুষকে খুব বেশি ভালবাসতেন। শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম বিয়ের রাতেই আমার কাছে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আন্দোলন করার জন্য এখন কেউ তাকে স্বীকার করে না। আমার সবার কথা মনে থাকে সুনামগঞ্জ-সিলেট থেকে অনেক মানুষ যেত। সবার কথা আমার মনে আছে। আব্দুজ জহুর, মতিউর রহমান, সুলতান মনসুর, শাহ আজিজ এরা আমার কাছে যেত। যুদ্ধে আমার কোনও অবদান নেই। আমি মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে ছিলাম শুধু মা বোনের ইজ্জত রক্ষার জন্য। আমি আমার মায়ের সন্তান। আজ কাল বিয়ে করে যৌবন কালে মাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আমি আজ হাবিবের জন্য দোয়া করতে এসেছি আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমি জীবনে যদি কোনও ভাল কাজ করে থাকি তাহলে সেই কাজের উছিলায় যেন হাবীবকে আল্লাহ জান্নাত দান করেন। জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রয়াত পীর হাবিবের জন্মের সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মিল আছে। উনি স্বাধীন বাংলাদেশের কলম যোদ্ধা। অনেকেই বলেন সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকতে হয় আমি একথা মানি না। সাংবাদিকদের পক্ষ থাকতে হবে সেটা বাংলাদেশের পক্ষে। পীর হাবিব নীতির প্রশ্নে কারো সাথে কখনই আপস করেননি। সামরিক সরকারের আমলে জেল পর্যন্ত খেটেছেন। তিনি সামরিক তন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিলেন। সাস্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন। সে শুধু সাহসীই ছিলনা। দুই হাত খুলে লিখতো। অনেকের হাতে কলম আছে কিন্তু সবাই লিখতে পারে না। কিন্তু পীর হাবিবের লেখনির মাধ্যমে আগুণের স্ফুলিঙ্গ বের হত। খুব কম লোক রয়েছে যারা সমালোচনা সহ্য করতে পারে। পীর হাবিবের সাংবাদিকতায় বিভিন্নতা রয়েছে তিনি গল্পের ঢং এ লিখতেন। উনি গল্পের ঢং এ লিখতেন বলেই আমাদের কাছে তার লেখা গ্রহণ যোগ্যতা পেত। আমার সাথে রাতে প্রায়ই ফোনে অনেক কথা হত তার। তিনি বলতেন আর কত দিন দেশে জঙ্গিবাদ থাকবে অপশক্তির লোকরা আর কত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিবে। পীর হাবিব ছিল একজন দেশ প্রেমিক সাংবাদিক সে সব সময় চাইত বাংলাদেশে যাতে সুস্থ রাজনীতি ফিরে আসে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমার তেমন কোনও যোগাযোগ ছিল না তার সাথে। তার সাথে আমার পরিচয় হয় ২০০৯ সালে। তিনি একটি টেলিভিশনে টকশো করতেন সেখান থেকে আমার পরিচয় হয়। তবে তার লেখার সাথে অনেক পূর্বেই আমার পরিচয় ছিল। সে একজন ভাল নীতিবান মানুষ। তার সুনামগঞ্জের পৈত্রিক বাড়ি দেখলেই বোঝা যায়। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, পীর হাবিব সাধারণ মানুষের পক্ষে লিখেছেন, আমি চলে গেলে তেমন কিছু হবে না। কিন্তু পীর হাবিব মারা যাওয়ায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। বাংলাদেশের মানত্রিচের আকাশে শকুন ঘুরছে তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। কিন্তু লেখকরা চলে যাচ্ছেন কে লিখবে শেখ হাসিনার কথা। পীর ভাই যেমন লিখেছে তেমনি আমরাও যেন সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারি। পীর হাবিব শুধু সুনামগঞ্জের না সারা পৃথিবীর বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি ছিলেন। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন,সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, ডিবিসি'র সম্পাদক প্রণব শাহা, জেলা প্রশাসক মো.জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, যুক্তরাজ্য আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক,সাবেক ফুটবলার কায়সার হামিদ প্রমুখ। পরিবারের পক্ষ থেকে পীর হাবিবুর রহমানের বড় ভাই অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর, ছোট ভাই সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও পীর হাবিবের কন্যা রাইসা নাজ চন্দ্র স্মিতা কৃতজ্ঞতা মূলক বক্তব্য রাখেন। প্রয়াত পীর হাবিবুর রহমানের ছেলে ব্যারিস্টার আহনাফ ফাহমিন অন্তর বলেন, আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনারা যে আমার বাবাকে এভাবে ভালবাসেন তা আমি কখনও বুঝতে পারি নাই। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই যদি আমার বাবা কোনও ভুল করে থাকেন তা হলে মাফ করে দিবেন। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুবের আহমদ অপু ও  জাপা নেতা সাজ্জাদুর রহমান সাজুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন পীর হাবিব কে শ্রদ্ধা জানাতে। 

সমাবেশে ঢাকা থেকে ছুটে আসা দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদক নেসারুল হক খোকন,সিলেট থেকে আগত সাংবাদিক উজ্জল মেহেদীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাংবাদিকরা বলেন,গণ মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য একজন তারকা সাংবাদিক হচ্ছেন পীর হাবিব ভাই। বাংলাদেশে সম্ভবত এটাই একজন সাংবাদিকের স্মরণে প্রথম কোন বিশাল শোক সমাবেশ যে সমাবেশে গ্রামগঞ্জ থেকে হাজার হাজার মানুষ সক্রিয় ও স্বতস্ফূর্তভাবে সমবেত হয়েছেন। এ সমাবেশ দেখে আমরা সত্যিই গর্বিত। এ থেকে  সারা দেশের তথা সুনামগঞ্জের সাংবাদিকদের শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছুই রয়েছে। দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি আশিকুর রহমান পীর বলেন,জুমআর নামাযের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত অধীর আগ্রহে সমবেত জনতা উপস্থিত থেকে পীর হাবিব সম্পর্কে জাতীয় নেতাদের বক্তব্যে অধীর আগ্রহে শ্রবন করেন। 



logo প্রকাশক - মোঃ মাহফুজুর রহমান সম্পাদক- মোঃ সাজেদুর রহমান নির্বাহী সম্পাদক- আব্দুস সালাম মিতুল