দোয়ারায় পৌনে ৪ কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণ কাজের তত্ত¡াবধানে এখলাছুর রহমান ফরাজি
০৫ মার্চ, ২০২২, 7:19 AM

০৫ মার্চ, ২০২২, 7:19 AM

দোয়ারায় পৌনে ৪ কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণ কাজের তত্ত¡াবধানে এখলাছুর রহমান ফরাজি
সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ১৯টি পিআইসি’র বেড়িবাঁধের মধ্যে বেশিরভাগ পিআইসি’র বাঁধের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এই ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। একাধিক বেড়িবাঁধে মাটি ভরাট, ঘাস লাগানো, ধূর্মুজ করা এবং বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলনসহ নানা অনিয়ম রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এমন অভিযোগের কথা জানান স্থানীয় একাধিক কৃষক। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এবার সুরমা ইউনিয়নের ফসলরক্ষা বেড়িবোঁধের কাজ ভাল হয়নি। কোনো কোনো ফসলরক্ষা বাঁধের বেশিরভাগ অংশে মাটিই ভরাট হয়নি। ঘাস লাগানো, ধূর্মুজ করা, বাঁধের দৈর্ঘ্য, প্রস্ত ও উচ্চতা সঠিকতা নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলনসহ নানা অনিয়ম রয়েছে বাঁধ নির্মাণে। একাধিক কৃষক জানান, সুরমা ইউনিয়নের ১৯টি পিআইসি’র বেড়িবাঁধের মধ্যে ১১ পিআইসির সভাপতি-সেক্রেটারি এখলাছুর রহমান ফরাজি ও তাঁর আত্মীয় স্বজনের নামে রয়েছে। সবকিছু সামলে এবারের পিআইসি’র বেড়িবাঁধ নির্মাণ একই ব্যক্তির তত্ত¡াবধানে থাকায় বাঁধের কাজ ভাল হয়নি। সুরমা ইউনিয়নের ১ নম্বর পিআইসি এখলাছুর রহমান ফরাজির নামে আছে। ৩ নম্বর পিআইসি এখলাছুর রহমান ফরাজির চাচাতো ভাই মো. আতাউর রহমান ফরাজির নামে, ২৮ নম্বর পিআইসি আপন ভাতিজা মোশারফ হোসেন ফরাজির নামে রয়েছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি পিআইসি রয়েছে এখলাছুর রহমান ফরাজির তত্ত¡াবধানে। সদস্য সচিব রহমত উল্ল্যাহ মানিক এখলাছুর রহমান ফরাজির ভগ্নিপতি। সুরমা ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদীর বাম তীরে অবস্থিত ৬ নম্বর পিআইসি’র নির্মিত বেড়িবাঁধ। এই পিআইসি’র সভাপতি আব্দুল জলিল, সদস্য সচিব মো. রফিক মিয়া। বাঁধে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এই বাঁধে ৩৬৭৮ ঘনমিটার মাটি ভরাটের নির্দেশনা থাকলেও এই পরিমাণে মাটি ভরাট হয়নি। দৈর্ঘ্য, প্রস্ত, উচ্চতা এবং ঢালু নিয়ে আছে কৃষকদের নানা প্রশ্ন। ডুবন্ত বাঁধের ভাঙা বন্ধকরণে যথেষ্ট পরিমাণে বাঁশ স্থাপন করা হয়নি। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। ধূর্মুজ করা হয়নি, ঘাস লাগনো হয়নি। এই পিআইসি’র বাঁধে অবস্থান করে কথা বলার সময় কয়েকজন কৃষক জানান, এই বাঁধের কাজ ১ নম্বর পিআইসি’র সভাপতি এখলাছুর রহমান ফরাজি তদারকি করছেন। খাসিয়ামরা নদীর বাম তীরে রয়েছে ৭ নম্বর পিআইসি’র নির্মিত বেড়িবাঁধ। এই পিআইসি’র সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সদস্য সচিব মো. ইয়াহ হিয়া। এই বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২০ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। এই বাঁধের মীরপুর গ্রামের পাশে তিন স্থানে মাটি ভরাট হয়নি। যতটুকু কাজ হয়েছে দৈর্ঘ্য, প্রস্ত, উচ্চতা এবং ঢালু নিয়ে সন্দেহ আছে কৃষকদের। নির্মিত বাঁধের উপরিভাগে এবং ঢালুতে ধূর্মুজ করা হয়নি, ঘাসও লাগনো হয়নি। কৃষকরা জানান, এই বাঁধের কাজ ১ নম্বর পিআইসি’র সভাপতি এখলাছুর রহমান ফরাজির তদারকিতে আছে। দোয়ারা উপজেলার কানলার হাওরপাড়ের ৩ নম্বর পিআইসি’র সদস্য সচিব মো. মাসুদ মিয়া বলেন, আমি বাঁধের কাজ করাচ্ছি। এই বাঁধের বরাদ্দ সম্ভবত: ২২ লক্ষ টাকা। একটি তদন্ত দল বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে আসায় আমার সমস্যা হয়েছে। বাঁধে মাটি ভরাট কম থাকায় নতুনভাবে মাটি ভরাট করাতে হচ্ছে। ক্লোজারে বাঁশ স্থাপন, ঘাস লাগালো ও ধূর্মুজ করায় সমস্যা থাকায় নতুনভাবে কাজ করছি। সদস্য সচিব মো. মাসুদ মিয়া এখলাছুর রহমান ফরাজির আপন ভাগিনা। ২৮ নম্বর পিআইসি’র সভাপতি মোশারফ হোসেন ফরাজী বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। ১ নম্বর পিআইসির সভাপতি এখলাছুর রহমান ফরাজি বাঁধ সম্পর্কে সকল তথ্য দেবেন। ওই পিআইসি’র সদস্য সচিব ইলিয়াছ ফরাজী এখলাছুর রহমান ফরাজির আপন ছোট ভাই। মোশারফ হোসেন ফরাজি ও সদস্য সচিব কলিম উদ্দীন ফরাজি এখলাছুর রহমানের ভাতিজা।৭ নম্বর পিআইসি’র সভাপতি মো. আব্দুল জলিল বলেন,আমার রাবারড্যাম এলাকার বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হয়নি। আরও ১০-১৫দিন লাগবে। মো.আব্দুল জলিল এখলাছুর রহমান ফরাজির ভাতিজা।৬ নম্বর পিআইসি’র সদস্য সচিব ইয়াহ হিয়া বলেন, আমার পিআইসি’র রাবারড্যাম মীরপুর এলাকায় বেড়িবাঁধে ৩ স্থানে মাটি ফেলার বাকী। ভাঙনে মাটি ভরাট, বস্তা ফেলা, বাঁশ স্থাপন, বাঁধের উপরিভাগে ড্রেসিং করার কাজ রয়েছে। এই বেড়িবাঁধ টেংরার এখলাছুর রহমান ফরাজীর। ২৬ নম্বর পিআইসি’র সভাপতি মো. ফজলুল হক লক্ষীপুর ইউনিয়নের নাগরিক। সুরমা ইউনিয়নে তার কোন জমি নেই। তবুও সে পিআইসির সভাপতি। ফজলুল হক বলেন, ভাঙায় বল্লী স্থাপন, বস্তা ফেলা, বাঁধের উপর ড্রেসিং ও ঘাস লাগানো বাকী রয়েছে। আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হতে। ৩৯ নম্বর পিআইসির সভাপতি মইন উদ্দীন। প্রকল্পের সাইন বোর্ডে সভাপতির যে মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছে সেটি রাজবাড়ি জেলার আলাউদ্দীনের নাম্বার। ৪৩ নম্বর পিআইসির সভাপতি ইউপি-সদস্যা সাহেদা আক্তার। উনি নিজেও জানেন না প্রকল্প কোথায়। বাধঁ নির্মাণ কাজের ২টি বিল উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় বিল উত্তোলনে তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি। সাইন বোর্ডে সদস্য সচিব চানঁ মিয়ার মোবাইল নাম্বার না দিয়ে মৃত ছেলের নাম্বার দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মোবাইল নাম্বারটি নরসিংদি জেলায় ব্যবহারিত হচ্ছে। ১ নম্বর পিআইসি’র সভাপতি এখলাছুর রহমান ফরাজি বলেন, আমার বাঁধের কাজ শেষ হতে আরও সপ্তাহ দশ দিন লাগবে। একাধিক পিআইসি তাঁর স্বজনদের নামে বা তদারকিতে আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নিজস্ব ট্রাক, ট্রলি ও এক্সেভেটর আছে। আমি বাঁধে মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহার করি। এই জন্য অনেকে বলেন আমার এসব বেড়িবাঁধ। উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সায়েম শাফিউল ইসলাম বলেন, প্রায় সময়ই ইউপি-সদস্যরা তাদের স্বজনদের নামে পিআইসি নিয়ে যায়। স্থানীয় ভাবে হাওরপাড়ে তাদের আতœীয় স্বজনই কৃষক থাকে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, আমার জানামতে ৬ ও ৭ নম্বর পিআইসি’র বেড়িবাঁধের কাজ শেষ। যদি শেষ না হয়, তবে খুঁজে দেখবো।সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, যদিও ২৮ ফেব্রæয়ারি বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ। তবুও কাজ চলমান আছে দোয়ারা উপজেলায়। হয়তো ২-৪ দিনের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হয়ে যাবে।