তাহিরপুরে ভূমিখেকো জহিরুলের দখলে কবরস্থান উদ্ধার হয়নি এখনও
১০ ডিসেম্বর, ২০২১, 12:22 AM

১০ ডিসেম্বর, ২০২১, 12:22 AM

তাহিরপুরে ভূমিখেকো জহিরুলের দখলে কবরস্থান উদ্ধার হয়নি এখনও
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল (উ:) ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা ভূমিখেকো জহিরুল মিয়া ও তার ভাইয়েরা কবরস্থান দখল করে নিয়েছে। কবরস্থান ব্যবস্থাপনা কমিটির এক আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন তদন্ত করে জহিুরুল মিয়ার দখলে থাকা ভূমি’র সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ভূমি উদ্ধারে আইনী সহায়তা পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালে স্যাটেলমেন্ট জরীপে মালসীগোপ মৌজার জে.এল.নং-৮৯, ১ নং-সরকারি খাস খতিয়ানের ৪৭২৯, ৪৭৩১, ৪৭৩৬ ও ৪৭৩৯ নং- দাগে (১.৮৫) শতাংশ ভূমি কবরস্থান রয়েছে। আরএস রেকর্ডভূক্ত এই ভূমির মালিক বাংলাদেশ সরকার। ৪৭৩৬ নং দাগের ভূমি থেকে (২০ শতক) ভূমি অবৈধভাবে দখল করে আছেন শিমুলতলা গ্রামের মৃত হরমুজ আলীর ছেলে জহিুরুল মিয়া। এ ছাড়াও উত্তর দিকের ৪৭২৬ নং দাগের ১৮ ফুট প্রস্ত গোপাটের আরও ২০ শতাংশ ভূমি জহিুরুল মিয়া দখলে নিয়ে গেছেন।
ওই সময় একই মৌজার জেএল নং-(এসএ) ১৩০, (আরএস) ৮৯, সাবেক রেকর্ডীয় দাগ-২০৫৫, ২০৫৬, ২০৫৭। এই তিন দাগের ভূমির পরিমাণ ৬৩ শতাংশ। এই ভূমি দানপত্র দলিল মূলে ২৭ জন রেকর্ডীয় মালিক কবরস্থানের নামে দান করেন। একই সাথে জহিুরুল মিয়ার ভাই রুস্তুম আলী ও নুরুল আলী ৬৩ শতক ভূমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে স্যাটেলমেন্ট জরীপে দুই ভাইয়ের নামে মাঠ পর্চা করিয়েছেন। অথচ এই ভূমি দান করেছেন ২৭ জন মালিক ও ৭৯ জন ওয়ারিশানসহ মোট ১০৬ জন।
শিমুলতলা গ্রামের মানুষজন জানান, শিমুলতলা গ্রামের জহিুরুল মিয়া অত্যন্ত উগ্রবাজ, মিথ্যাবাদী। সে প্রতিনিয়ত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। জহিুরুল মিয়ার ভাই নুরুল আলী ভূমি অফিসে চাকুরি করতেন। এই পরিচয় ও কৌশল খাটিয়ে কবরস্থানের সরকারি ও রেকর্ডীয় (ভূমি) দখলে নেন তিনি।
কবরস্থান ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন সুষ্ঠু তদন্ত করে ২৫/৪/২১ইং একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তি জহিুরুল ইসলাম বলেন, শিমুলতলা কবরস্থানের জায়গা অন্যদিকে ঠেলাঠেলি করে আমার দিকে নিতে এসেছে। এই জন্য বাঁশেরঝার লাগিয়ে জায়গা দখল রেখেছি আমি। আমাকে কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না। এই জায়গা দখলে রাখতে লড়াই করে যাবো। অফিস আদালত কিভাবে ঘুচিয়ে চলতে হয় তা আমি জানি।
একই গ্রামের বাসিন্দা মো. মোজাহার হোসেন বলেন, কবরস্থানের সম্পুর্ণ ভূমি উদ্ধার না করলে উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব নয়। এই কবরস্থানের ভূমি রয়েছে সরকারী খতিয়ানের এবং রেকর্ডীয় মালিকদের দানকৃত ভূমি। আমরা আইনীভাবে কবরস্থানের ভূমি উদ্ধার চাই।
শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা ও কবরস্থা ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বকুল বলেন, গ্রামের কবরস্থান উদ্ধারে আমরা অনেক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ নিয়ে জহিুরুল মিয়ার দ্বারা নানাভাবে অপমান হচ্ছি।
কবরস্থান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো.ফরিদ মিয়া বলেন, কবরস্থানের সরকারি ও রেকর্ডীয় ভূমি উদ্ধার নিয়ে চেষ্টা করায় আমাদেরকে মারধর করার হুমকি দিচ্ছে জহিুরুল মিয়া। আমাদেরকে দেখলেই অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে এবং প্রাণে মারার হুমকি দেয়।
দানকৃত জমির দাতা অ্যাড. হোসেন তওফিক চৌধুরী বলেন, জনস্বার্থে আমি ও আমার মামাত ভাইয়েরা আমাদের রেকর্র্ডীয় ভূমি কবরস্থানের নামে দান করে দিয়েছি। এই ভূমি যদি কারো নামে রেকর্ড করিয়ে নেয়। সেটি আদালতের মাধ্যমে সংশোধন করিয়ে নিতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলা উদ্দিন বলেন, শিমুলতলা গ্রামের কবরস্থানের জায়গা তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জহিরুল মিয়া অবৈধভাবে কবরস্থানের কিছু জায়গায় বাঁশ ঝাড় লাগিয়েছেন। উচ্ছেদ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। আশাকরি কিছুদিনের মধ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে কবরস্থানের জায়গা দখল মুক্ত করা হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রায়হান কবীর বলেন, কবরস্থানের সরকারি ভূমি উদ্ধারে সহকারি কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।