করোনার কারণে সীমান্ত মেলায় মিলন হলোনা দুই বাংলার মানুষের
গৌতম চন্দ্র বর্মন, ঠাকুরগাঁওঃ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২১, 12:33 PM

গৌতম চন্দ্র বর্মন, ঠাকুরগাঁওঃ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২১, 12:33 PM

করোনার কারণে সীমান্ত মেলায় মিলন হলোনা দুই বাংলার মানুষের
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার টেংরিয়া গোবিন্দপুর গ্রামের কুলিক নদীর পারে ঐতিহ্যবাহী পাথরকালি মেলা উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দুই বাংলার হাজারো মানুষ স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে কুশল বিনিময় করে আসছে যুগ যুগ ধরে।
তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কুলিক নদীর পারের ঐতিহ্যবাহী সেই পাথরকালি মেলা।
কালী পুজার পরে ওই এলাকায় বসে এই পাথরকালি মেলা। মেলাকে ঘিরে একদিনের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় । দুই বাংলার মানুষ কাঁটাতারের বেড়ায় আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু এবার বাংলাদেশের স্বজনরা এলেও ভারতের কাঁটাতারের বেড়ায় ভিড়তে পারেনি তাদের স্বজনেরা । স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে না পারায় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। অনেকেই সকালে হাসিমুখে দেখা করতে এসে বিকেল বেলায় কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরেছেন।
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দুই দেশের মানুষকে আলাদা করে রেখেছে । কিন্তু দুটি ভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখা আলাদা করতে পারেনি মানুষের মনের টান । এই টানেই মানুষ ছুটে যায় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে, সুযোগ পেলেই মিশে যায় একে অন্যের সঙ্গে । পেতে চায় মায়া-মমতা, স্বজনদের সান্নিধ্য।
তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এবার সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে কোন মানুষজনকে ভিড়ে জমাতে দেয়নি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী।
হরিপুর উপজেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, পাথরকালী জিউ পূজা উপলক্ষে প্রতি বছর গোবিন্দপুর কুলিক নদীরপাড়ে কাঁটাতারের কাছে দুই সীমান্তে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের প্রথম শুক্রবার লাখো মানুষের সমাগমে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলা হয়ে থাকে । এবার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়নি। এতে কাঁটাতারের ওপারে থাকা আত্মীয়স্বজনরা মিলিত হতে পারনেনি কেউই।
সেতাবগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা রুনা বেগম বলেন, ভারতে ভাই-ভাবি বসবাস করেন। তাই তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি কিন্তু পুলিশ-বিজিবি কাঁটাতারের পাশে ভিড়তে দেয়নি। পীরগঞ্জ থেকে আসা বাকলী রাণী (৫৭), চন্দ চাঁদ রায় (৬০) আমল (৪৭) সহ বিভিন্ন এলাকার অনেকে বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। দুপুর গড়িয়ে বেলা শেষের দিকে তারপরেও দেখা করতে পারছিনা। করোনাভাইরাসের কারণে সব বন্ধ। আত্মীয়রা ওপারে অপেক্ষায় রয়েছে কাঁটাতারের কাছে আসতে পারছেনা। এবার পূজা সম্পন্ন করেই বাড়ি যাব। আগামী বছর দেখা করার অপেক্ষায় রইলাম।’
এদিকে, পূজা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নগেন কুমার পাল বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মিলনমেলা করা সম্ভব হয়নি, শুধু পূ্জা পালন করা হয়েছে।’
অন্যদিকে, হরিপুরের গোবিন্দপুর ও চাপাসার ক্যাম্পে কর্মরত সীমান্ত বাহিনীর সদস্যরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এবার মিলনমেলা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে কাঁটাতারের কাছে যেন কোন বাংলাদেশি না যায় সে বিষয়ে আমাদের অনুরোধ করেছেন তারা।